1. admin@voicebarta.com : admin :
শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৫৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
“জামায়াত আমিরের নেতৃত্বে ইসলামি রাষ্ট্র গঠন সম্ভব”, মতবিনিময়ে কওমি আলেমরা সংখ্যালঘু ট্রামকার্ড ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে – মুফতি ফয়জুল করীম অন্তরবর্তী সরকারের প্রধান ডা: মো: ইউনুস ঢাকা দোহারে সু-প্রশিদ্ধ জামিয়া মাদানিয়া দারুসসুন্নাহ মাদরাসার নতুন ভবনের কাজ আরম্ভ মুন্সিগঞ্জের খারশুর এলাকায় বাস সিএনজি মুখোমুখি ৩জনের প্রানহানী ঢাকার দোহারের মেনটঘাটে বালু ব্যবসায়ীদের কবলে সৌন্দর্য আজ হুমকির মুখে বাংলাদেশের নতুন মন্ত্রী পরিষদে যারা দায়িত্ব পেলেন বিশ্বব্যাপী থার্টি ফার্স্ট নাইট উৎযাপন দেশ জাতি ও মুসলমানদের কল্যান কামনা করে চরমোনাইয়ের অগ্রহায়নের বাৎসরিক মাহফিল আখেরি মুনাজাত অনুষ্ঠিত ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসরকে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩জনের মৃত্যু

দ্বীনের দায়ী বা হযরত ওলামায়ে কেরামগনের মুহাসাবা

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ২৪৬ বার পঠিত

ভয়েস বার্তা ডেস্ক:

মহান আল্লাহ তা‘আলার পথের দা‘য়ীদের প্রকাশ্য ও গোপনে তাকওয়ার এ গুণাগুন অবলম্বন করা খুবই প্রয়োজন। আমি এখানে আল্লাহ তা‘আলার পথের দা‘য়ীদের আল্লাহর সাহায্য পাওয়া ও তাদের যে সব সম্বল সংগ্রহ করা উচিত সেসব বিষয়ে কিছুটা আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। 

১. আল্লাহ পথের দা‘য়ীরা যে দিকে মানুষকে
ডাকবে সে সম্পর্কে ইলম তথা জ্ঞান থাকা ।
২. দাওয়াতের ক্ষেত্রে ধৈর্যশীল হওয়া ।
৩. হিকমত বা প্রজ্ঞা অবলম্বন । 
৪. দা‘য়ীকে উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান হওয়া ।
৫. দা‘য়ীকে জড়তা ও প্রতিবন্ধকতা পরিহার করা ।
৬.দা‘য়ীর অন্তর বিরোধীদের প্রতি উদার হওয়া । 

১. আল্লাহ পথের দা‘য়ীরা যে দিকে মানুষকে
ডাকবে সে সম্পর্কে ইলম তথা জ্ঞান থাকা।
কুরআন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহের সহিহ জ্ঞান থাকা। কেননা এ দু’ প্রকার ইলম ব্যতীত অন্যান্য ইলমকে প্রথমে কুরআন ও সুন্নাহের কষ্টিপাথরে যাচাই করতে হয়, যাচাইয়ে পর তা হয়ত কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী হবে বা তা বিরোধী হবে। যদি কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী হয় তবে তা গ্রহণ করা হবে। আর কুরআন ও সুন্নার বিরোধী হলে তা যেই বলুক প্রত্যাখ্যান করা ফরয। 

فقد ثبت عن ابن عباس رضي الله عنهما أنه قال: «يوشك أن تنزل عليكم حجارة من السماء أقول: قال رسول الله وتقولون: قال أبو بكر وعمر»

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সম্ভবত তোমাদের উপর আকাশ থেকে পাথর নাযিল হলেও আমি বলব, এ কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অথচ তোমরা বলছ: আবু বকর ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এরূপ বলেছেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথার বিপরীত আবু বকর ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার কথার ব্যাপারে যদি এরূপ সতর্কীকরণ করা হয় তবে যারা ইলম, তাকওয়া, রাসূলের সাহচর্য ও খিলাফতে তাদের চেয়ে অনেক কম মর্যাদাবান তাদের কথা গ্রহণের ক্ষেত্রে কিরূপ হবে?! অতএব তাদের কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কথা প্রত্যাখ্যান করা অধিক সমীচীন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ ﴾ [النور: ٦٣] 

“অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন নিজদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে।” সূরা : আন-নূর: ৬৩

ইমাম আহমদ রহ. বলেছেন, তুমি কি জান ফিতনা কি? এখানে ফিতনা হলো শিরক। সম্ভবত কারো অন্তরে যখন কোন বক্রতা উদয় হয় ও তা কুরআন সুন্নাহ ব্যতীত অন্য কিছুর দিকে প্রত্যাবর্তন করে তাহলে সে ধ্বংস হবে।

আল্লাহ পথের দা‘য়ীর (আলেম) প্রথম সম্বল হবে আল্লাহর কিতাব আল কুরআন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহীহ ও গ্রহণযোগ্য হাদীসের ইলমের দ্বারা পাথেয় সংগ্রহ করা। ইলম ব্যতীত দাওয়াত অজ্ঞতাপূর্ণ দাওয়াত। আর অজ্ঞভাবে দাওয়াতের সুফলের চেয়ে কুফলই বেশি। কেননা একজন দা‘য়ী (আলেম) নিজে একজন পথপ্রদর্শক ও উপদেশ দাতা। আর সে দা‘য়ী (আলেম) যদি অজ্ঞ হয় তবে সে নিজে পথ ভ্রষ্ট হবে এবং অন্যদেরকেও পথ ভ্রষ্ট করবে। আল্লাহর কাছে আমরা এ কাজ থেকে পানাহ চাচ্ছি। তার অজ্ঞতা দু’টি অজ্ঞতাকে শামিল করে। আর যে অজ্ঞতা দু’টি অজ্ঞতাকে শামিল করে তা সাধারণ অজ্ঞতার চেয়ে মারাত্মক ও ক্ষতিকর। কেননা সাধারণ অজ্ঞতা ব্যক্তিকে কথা বলা থেকে বিরত রাখে, তবে শিক্ষার মাধ্যমে এ অজ্ঞতা দূরীভূত হয়। কিন্তু না জেনে জানার ভান করাই হচ্ছে মারাত্মক ক্ষতিকর। কেননা এ ধরনের অজ্ঞরা কখনো চুপ থাকে না, বরং না জেনেও কথা বলতে থাকে। তখন তারা আলোকিত করার চেয়ে ধ্বংসই বেশি করে।

২. দাওয়াতের ক্ষেত্রে ধৈর্যশীল হওয়া ।
সর্ব হালাতে একজন আলেমকে অবশ্যই ধৈর্য সহকারী দাওয়াত দিতে হবে এ ক্ষেত্রে অতি উচ্ছসিত অথবা খুব তারাহুরা না করা।

৩. হিকমত বা প্রজ্ঞা অবলম্বন । 
মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-
﴿ ٱدۡعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِٱلۡحِكۡمَةِ وَٱلۡمَوۡعِظَةِ ٱلۡحَسَنَةِۖ وَجَٰدِلۡهُم بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُۚ ﴾ [النحل: ١٢٥] 

“তুমি তোমরা রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর”। [সূরা: আন-নাহাল: ১২৫]
সুতরাং হিকমত ছাড়া কর্যত দাওয়াতের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

৪. দা‘য়ীকে উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান হওয়া ।
হাদিস শরীফের মধ্যে রাসুল সা: বলেছেন- তোমাদের মধ্যে আমাদের নিকট ঐ ব্যাক্তি বেশি প্রিয় যে বেশি চরিত্রবান।
তাই একজন দায়ীকে অবশ্যই হুসনে চরিত্রের অধিকারী হওয়া আবশ্যকীয়।

৫. দা‘য়ীকে জড়তা ও প্রতিবন্ধকতা পরিহার করা ।
জড়তা একজন দায়ীর কাজের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাই এসব বিষয়ে সমাধানের জন্য দেশে অনেক কোর্স চালু রয়েছে সেখান থেকে আমরা উপকৃত হতে পারি।

৬. দা‘য়ীর অন্তর বিরোধীদের প্রতি উদার হওয়া । 
যদি কোন তাকে প্রকৃত অর্থে দায়ী দাবি করে তবে অবশ্বই তাকে ভিন্ন মতাদর্শী বা ভিন্ন প্রতিপক্ষের প্রতি মন উদার রেখে দ্বীনে দাওয়াত পৌছে দিতে হবে।

হে আল্লাহর পথের দা‘য়ী (আলেম)!
তোমরা আল্লাহর বাণী ভালভাবে অনুধাবন করো।
অর্থাৎ তিনটি বিষয়ে জেনে বুঝে দাওয়াত দাও।

প্রথমত: যে দিকে দাওয়াত দিবে সে ব্যাপারে দূরদর্শী হওয়া। যেমন: যে দিকে দাওয়াত দিবে সে ব্যাপারে শর‘য়ী জ্ঞান থাকে। কেননা সে হয়ত কোন কাজ ফরয ভেবে সেদিকে আহ্বান করবে কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল তা ফরয নয়। ফলে সে আল্লাহর বান্দাহর উপর অনাবশ্যকীয় জিনিসকে অত্যাবশ্যকীয় করে দিবে। আবার কখনও সে হারাম ভেবে তা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান করবে, অথচ তা আল্লাহর দ্বীনে হারাম নয়, ফলে সে আল্লাহর হালালকৃত জিনিসকে হারাম করল। 

দ্বিতীয়ত: দাওয়াতের অবস্থা সম্পর্কে দূরদর্শী হওয়া। এজন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মু‘য়ায রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইয়ামানে প্রেরণ করেন তখন তাকে বলেছিলেন,

«إِنَّكَ سَتَأْتِي قَوْمًا أَهْلَ كِتَابٍ »

“তুমি আহলে কিতাবের এক সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ।” তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে বলেছেন এবং এ জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। অতঃএব দা‘য়ী যাদেরকে দাওয়াত দিবে তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানবে। তাদের ইলমী অবস্থা কি সে সম্পর্কে ভালভাবে জ্ঞাত হবে। তাদের তর্ক বিতর্ক করার দক্ষতা কি তাও জানবে যাতে প্রস্তুতি নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা ও বিতর্ক করা যায়। কেননা তুমি যখন এ ধরনের বিতর্কে লিপ্ত হবে তখন তোমাকে সত্যের বিজয়ের জন্য শক্তিশালী হতে হবে। কেননা সত্য বিজয় তখন তোমার দক্ষতার উপর নির্ভরশীল। তুমি কখনও এটা ভেবো না যে বাতিল শক্তি তোমার প্রতি সদয় হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّكُمْ تَخْتَصِمُونَ إِلَيَّ، وَلَعَلَّ بَعْضَكُمْ أَنْ يَكُونَ أَلْحَنَ بِحُجَّتِهِ مِنْ بَعْضٍ، فَأَقْضِيَ لَهُ عَلَى نَحْوٍ مِمَّا أَسْمَعُ مِنْهُ »

“উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা মামলা মুকাদ্দমা নিয়ে আমার কাছে আস এবং তোমাদের একজন অপরজন অপেক্ষা অধিক বাকপটূ হয়ে যুক্তি তর্কের মাধ্যমে স্বীয় দাবী প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। আমি কথা শুনে তার অনুকুলে রায় প্রদান করি”।

সুতরাং এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, বাদী বাতিল হলেও কখনও কখনও অন্যের চেয়ে অধিক বাকপটূ হয়ে যুক্তি তর্কের মাধ্যমে স্বীয় দাবী প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে, ফলে বিচারক তার কথা শুনে তার অনুকূলে ফয়সালা দিয়ে থাকে। তাই যাদেরকে দাওয়াত দিবে তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানা আবশ্যক।

তৃতীয়ত: দাওয়াতের পদ্ধতি সম্পর্কে দূরদর্শী হওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ ٱدۡعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِٱلۡحِكۡمَةِ وَٱلۡمَوۡعِظَةِ ٱلۡحَسَنَةِۖ وَجَٰدِلۡهُم بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُۚ ﴾ [النحل: ١٢٥] 

“তুমি তোমরা রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর”। [সূরা: আন-নাহাল: ১২৫]

﴿ تِلۡكَ مِنۡ أَنۢبَآءِ ٱلۡغَيۡبِ نُوحِيهَآ إِلَيۡكَۖ مَا كُنتَ تَعۡلَمُهَآ أَنتَ وَلَا قَوۡمُكَ مِن قَبۡلِ هَٰذَاۖ فَٱصۡبِرۡۖ إِنَّ ٱلۡعَٰقِبَةَ لِلۡمُتَّقِينَ ٤٩ ﴾ [هود: ٤٩] 

“এগুলো গায়েবের সংবাদ, আমি তোমাকে ওহীর মাধ্যমে তা জানাচ্ছি। ইতঃপূর্বে তা না তুমি জানতে এবং না তোমার কওম। সুতরাং তুমি সবর কর। নিশ্চয় শুভ পরিণাম কেবল মুত্তাকীদের জন্য”। [সূরা: হূদ: ৪৯]

দাওয়াতী কাজে মানুষ বিরোধীদের থেকে যে সব অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয় সে ব্যাপারে ধৈর্যশীল হওয়া অত্যাবশ্যক। কেননা যারাই আল্লাহর পথে দাওয়াত দিবে তারা অবশ্যই নিন্মোক্ত আয়াত অনুযায়ী জুলুম নির্যাতনের শিকার হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَكَذَٰلِكَ جَعَلۡنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوّٗا مِّنَ ٱلۡمُجۡرِمِينَۗ وَكَفَىٰ بِرَبِّكَ هَادِيٗا وَنَصِيرٗا ٣١ ﴾ [الفرقان: ٣٠] 

“আর এভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর জন্য অপরাধীদের মধ্য থেকে শত্রু বানিয়েছি। আর পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারী হিসেবে তোমার রবই যথেষ্ট।” [সূরা আল-ফুরকান: ৩০]

সুতরাং প্রত্যেক সত্যপন্থী দাওয়াতের বিরোধী দল থাকবেই। তারা নানা বাধা বিপত্তি, ঝগড়া ফ্যাসাদ ও সমস্যা সৃষ্টি করবে। কিন্তু দা‘য়ীর উপর কর্তব্য হলো তারা দাওয়াতী কাজে এ সব বিরোধিতার উপর ধৈর্যধারণ করবে, এমনকি তারা যদি এ কথাও বলে যে, এটা ভ্রান্ত ও বাতিল দাওয়াত, তথাপিও সে ধৈর্যধারণ করবে; কারণ সে নিশ্চিতভাবে জানে যে, এটা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ মোতাবেক সত্য দাওয়াত। অতঃএব, সে এতে ধৈর্য ধরবে ।
অতঃএব, দাওয়াতী কাজে নিজের বিরোধীদের কথা সত্য হলে দা‘য়ীর উপর ফরয হলো সে নিজের মত থেকে সরে গিয়ে বিরোধীদের মত গ্রহণ করবে। আর যদি বিরোধীরা বাতিল হয় তবে দাওয়াতী কাজে নিজে অটল ও সুদৃঢ় থাকবে।

এমনিভাবে দা‘য়ী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হলে ধৈর্যধারণ করবে। কেননা দা‘য়ী অবশ্যই শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হবেই। আল্লাহর প্রেরিত নবী রাসূল আলাইহিমুস সালামরা শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতিত হয়েছিলেন। মহান আল্লাহর নিন্মোক্ত বাণী পড়ুন:

﴿ كَذَٰلِكَ مَآ أَتَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِم مِّن رَّسُولٍ إِلَّا قَالُواْ سَاحِرٌ أَوۡ مَجۡنُونٌ ٥٢ ﴾ [الذاريات: ٥٢] 

“এভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে যে রাসূলই এসেছে, তারা বলেছে, ‘এ তো একজন জাদুকর অথবা উন্মাদ’’। [সূরা : আয-যারিয়াত: ৫২]

সুতরাং আপনার কি ধারণা যাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী নাযিল হত তাদেরকে জাদুকর অথবা উন্মাদ বলা হত?! রাসূলগণ অবশ্যই শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিনের শিকার হয়েছিলেন। তা সত্বেও তারা ধৈর্যধারণ করেছিলেন।

ঈসা আলাইহিস সালামকে মানসিক নানা জুলুম নির্যাতন করা হয়েছে, এমনকি ইয়াহুদিরা তাকে জারজ সন্তান হিসেবে অপবাদ দিয়েছিল, তাদের ভ্রান্ত ধারণা মতে তারা তাকে হত্যা করেছে ও শূলে চড়িয়েছে। 

কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَٰكِن شُبِّهَ لَهُمۡۚ وَإِنَّ ٱلَّذِينَ ٱخۡتَلَفُواْ فِيهِ لَفِي شَكّٖ مِّنۡهُۚ مَا لَهُم بِهِۦ مِنۡ عِلۡمٍ إِلَّا ٱتِّبَاعَ ٱلظَّنِّۚ وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينَۢا ١٥٧ بَل رَّفَعَهُ ٱللَّهُ إِلَيۡهِۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمٗا ١٥٨ ﴾ [النساء: ١٥٧، ١٥٨] 

“আর তারা তাকে হত্যা করেনি এবং তাকে শূলেও চড়ায়নি। বরং তাদেরকে ধাঁধায় ফেলা হয়েছিল। আর নিশ্চয় যারা তাতে মতবিরোধ করেছিল,অবশ্যই তারা তার ব্যাপারে সন্দেহের মধ্যে ছিল। ধারণার অনুসরণ ছাড়া এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই। আর এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করেনি। বরং আল্লাহ তাঁর কাছে তাকে তুলে নিয়েছেন এবং আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা : আন্-নিসা: ১৫৭-১৫৮]
ফলে তিনি তাদের থেকে রক্ষা পেলেন।

দাওয়াতের কিছু নমুনা দেয়াটা উপযোগী মনে করছি।

এক বেদুঈন ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদে (মসজিদে নববী) প্রবেশ করল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে মসজিদে বসে ছিলেন। বেদুঈনটি মসজিদের এক পাশে পেশাব করল। সাহাবীগণ তাকে কঠোরভাবে ধমক দিল। কিন্তু আল্লাহর হিকমত প্রাপ্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে পেশাব করতে বারণ না করে লোকদেরকে ধমক দিতে বারণ করলেন। বেদুঈন লোকটি পেশাব শেষ করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে নির্দেশ দিলেন লোকটির পেশাবের উপর এক বালটি পানি ঢেলে দিতে। ফলে মসজিদ থেকে ময়লা দূর হলো এবং পবিত্র হয়ে গেল। আর বেদুঈন লোকটিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডেকে বললেন:

«إِنَّ هَذِهِ الْمَسَاجِدَ لَا تَصْلُحُ لِشَيْءٍ مِنْ هَذَا الْبَوْلِ، وَلَا الْقَذَرِ إِنَّمَا هِيَ لِذِكْرِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَالصَّلَاةِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ»

“মসজিদসমূহে কষ্টদায়ক ও অপবিত্রকর কিছু করা উচিত নয়, এগুলো নামায ও কুরআন তিলাওয়াতের স্থান”।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ সুন্দর আচরণ লোকটির হৃদয় গলে গেল। এজন্যই কোন কোন রেওয়ায়েতে আছে লোকটি বলল:

«اللهم ارحمني ومحمداً ولا ترحم معنا أحداً»

“ইয়া আল্লাহ! আমাকে ও মুহাম্মদকে দয়া করো, আমাদের সাথে কাউকে দয়া করো না”।

কেননা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে সুন্দর আচরণ করেছেন। পক্ষান্তরে সাহাবীগণ অজ্ঞ লোকটির অবস্থা না বুঝে অন্যায় কাজ দূর করতে এগিয়ে এসেছিল যা হিকমতের পরিপন্থী ছিল।

দাঈর আরো কিছু গুণাবলি-

১.ধর্মীয় জ্ঞানে পারদর্শীতা-
ধর্মীয় জ্ঞান অর্থাৎ কুরআন, হাদীস ও ফিকহের প্রয়োজনীয় জ্ঞান ব্যতীত কারো পক্ষেই ইসলামকে স্বমহিমায় মানুষের সামনে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সর্বপ্রথম অবতরণ করেন ‘ইকরা’ বা ‘পড়’। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ সকল দাঈকে এ বার্তাই দিয়েছেন যে, দাওয়াতের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই দ্বীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে হবে। নবীগণকেও মহান আল্লাহ প্রথমেই ধর্মীয় জ্ঞানে পারদর্শী করার পর দাওয়াতী দায়িত্ব পালনে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন, হযরত ইউসুফ (আ.) এর ব্যপারে কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে,

قُلْ هٰذِهِ سَبِيْلِيْ أَدْعُوْا إِلَى اللهِ- عَلٰى بَصِيْرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِيْ-

-বলুন, এটাই আমার পথ, আল্লাহর পথে আহ্বান জানাচ্ছি, আমি ও আমার অনুসারীরা, স্পষ্ট জ্ঞানের মাধ্যমে। (সূরা ইউসুফ, আয়াত-১০৮)
বর্তমান সময়ের দাঈদের একটা বড় অংশের মাঝেই ধর্মীয় জ্ঞানের অপরিপক্কতা বেশ লক্ষণীয়। যে কারণে অনেক আলোচকই ভুল ও খ-িতভাবে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছেন। অজ্ঞতার কারণে অনেক আলোচককে ভুল ফাতওয়া প্রদান করতেও দেখা যায়। যা সামগ্রিকভাবে অকল্যাণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২. চারিত্রিক মাধুর্যতা-
মানুষের চরিত্রের দুটি দিক, ভালো ও মন্দ। একজন দাঈর জন্য চরিত্রের ভালো দিকগুলো অনুশীলন করা অপরিহার্য। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দাঈ। তাঁর চরিত্রের শ্রেষ্ঠত্বের কথা বর্ণনা করে মহান আল্লাহ বলেন, “আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত” (সূরা কলম, আয়াত-৪)। এ পৃথিবীতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অবির্ভাবের অন্যতম কারণ মানুষকে উত্তম চরিত্রের শিক্ষা দেওয়া। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমি উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা সাধনের জন্যই প্রেরিত হয়েছি” (আস-সুনান আল-কুবরা লিল বায়হাকী, হাদীস নং ৮৯৪৯)। উত্তম চরিত্র অবলম্বনের গুরুত্ব বুঝাতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমাদের মাঝে সে ব্যক্তিই উত্তম যার চরিত্র সর্বোৎকৃষ্ট।” (বুখারী, হাদীস নং ৩৫৫৯)

৩. ধৈর্য ও অবিচলতা-
যেকোনো কাজে সাফল্য লাভের অন্যতম শর্ত ধৈর্য ও অবিচলতা। প্রত্যেক দাঈর জন্য ধৈর্যশীল হওয়া অপরিহার্য। কোনো কওমই এক বাক্যে তাওহীদের মূলনীতি গ্রহণ করেনি। বরং বিরোধিতা করেছে। ইসলামের পক্ষে দাওয়াত দানকারীকে নানাভাবে অত্যাচার করা হয়েছে। দাওয়াতী কাজে বিপদাপদ আসা নতুন কোনো বিষয় নয়। নূহ (আ.) থেকেই শুরু হয়েছে এর ইতিহাস। সালিহ (আ.), ইবরাহীম (আ.), মূসা (আ.), শুআয়ব (আ.), ইলিয়াস (আ.), ঈসা (আ.) এবং শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকলেই যুলম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং ধৈর্যধারণ করেছেন। পবিত্র কুরআনে সে সকল নবীগণের ধৈর্যের ইতিহাস বর্ণনা করে মহান আল্লাহ বলেন: “তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে যদিও এখনও তোমাদের নিকট তোমাদের পূর্ববর্তীদের অনুরূপ অবস্থা আসেনি ? অর্থ-সংকট ও দুঃখ-ক্লেশ তাদেরকে স্পর্শ করেছিল এবং তারা ভীত ও কম্পিত হয়েছিল। এমনকি রাসূল এবং তাঁর সঙ্গে ঈমান আনয়নকারীগণ বলে উঠেছিল, ‘আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে?’ জেনে রাখ! অবশ্যই আল্লাহর সাহায্য নিকটে।” (সূরা বাকারা -২১৪)
বর্তমান যুগের দাঈদেরও নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদেরও নবী-রাসূলগণের ন্যায় ধৈর্য অবলম্বন করতে হবে। তবেই প্রকৃত দ্বীন প্রচারে সাফল্য আসবে।

৪. ত্যাগের মানসিকতা-
ইসলামের প্রচার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ত্যাগ ও কুরবানী ছাড়া এ কাজে সফল হওয়া যায় না। নবীগণের (আ.) জীবনীতে আমরা এর উদাহরণ পাই। পবিত্র কুরআনে নূহ (আ.) এর কাহিনী বর্ণনা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, “তিনি (নূহ) বলেছিলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আমার সম্প্রদায়কে দিবারাত্রি আহ্বান করেছি। কিন্তু আমার আহ্বান তাদের পলায়ন প্রবণতাই বৃদ্ধি করেছে।” (সূরা নূহ, আয়াত-৫) এ আয়াতগুলোই প্রমাণ করে হযরত নূহ (আ.) ব্যক্তিগত ভোগ-বিলাস ত্যাগ করে দিন-রাত মানুষের কাছে গিয়ে তাওহীদের দাওয়াত প্রচার করেছেন।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাওয়াতী জীবনও ছিল অনেক ত্যাগ ও কুরবানীর। ভোগ-বিলাসের লেশ মাত্রও ছিল না তাঁর দাওয়াতী জীবনে। ভোগ নয় ত্যাগই ছিল তাঁর জীবনের মহান আদর্শ। মক্কায় তাঁর দাওয়াতী মিশনকে থামিয়ে দেয়ার জন্য যখন কাফিরদের সকল কৌশল ব্যর্থ হয়েছিল তখন মক্কার কুরাইশরা অর্থ-সম্পদ, ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে তাঁকে ফিরাতে চেষ্টা করল। রাসূল (সা.) পরিষ্কার করে তাদের জানিয়ে দিলেন, “চাচাজান, আল্লাহর শপথ! যদি এরা আমার ডান হাতে সূর্য এবং বাম হাতে চন্দ্র এনে দেয় তবুও এ মহা সত্য প্রচার সংক্রান্ত আমার কর্তব্য থেকে এক মুহূর্তের জন্যও আমি বিচ্যুত হব না। এ মহামহিম কার্যে হয় আল্লাহ আমাকে জয়যুক্ত করবেন, না হয় আমি ধ্বংস হয়ে যাব। কিন্তু আমি কখনই এ কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হব না।

৫. তাকওয়া ও ইখলাস-
দাওয়াতী কাজে আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাকওয়া ও ইখলাস। ইসলামে এ বিষয় দুটি এতটাই গুরুত্ব বহন করে যে, এগুলো ব্যতীত মানুষের কোনো ভাল কাজই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে কবূল হয় না। সহীহ বুখারীতে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিয়ত অনুযায়ী সমস্ত কাজের ফলাফল হবে। প্রত্যেকেই যে উদ্দেশ্যে কাজ করবে সে তাই পাবে।” (বুখারী, হাদীস নং ১)
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, “তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল দ্বীনকে কেবল তারই জন্য নিবেদিত করে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে এবং সালাত কায়িম করতে ও যাকাত দিতে, এটাই সঠিক দ্বীন।” (সূরা বায়্যিনাহ, আয়াত-৫)

উপরে উল্লিখিত হাদীস ও আয়াতসমূহে একনিষ্ঠভাবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সকল কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বস্তুত ইখলাস ও জাগতিক স্বার্থ তথা ব্যক্তি স্বার্থ, দলীয় স্বার্থ কিংবা অন্য কোনো স্বার্থ পরিহার ব্যতীত যতই দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করা হোক না কেন, এতে সফল্য আসার সম্ভাবনা নেই। আর বর্তমানে অগ্রিম টাকা নিয়ে, দর কষাকষি করে অধিক অর্থ উপার্জনের যে মহোৎসব চলছে এর দ্বারা টাকা পয়সা রোজগার এবং আলীশান জীবন যাপন ছাড়া প্রকৃত ইসলাম প্রচারের কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

৬. পরমত সহিষ্ণুতা ও আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখা-
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ মু’মিনদের গুণাবলি বর্ণনা করে বলেন, “যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল; আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১৩৪) অসহিষ্ণুতা সামাজিক শৃঙ্খলা ও শান্তি বিনষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ। একটা সমাজে নানা ধর্ম, চিন্তা ও মতের মানুষের বসবাস। প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ ধর্ম, চিন্তা ও মতকে সঠিক ও সর্বোত্তম বলে মনে করে। এক্ষেত্রে সকল দাঈর কর্তব্য ভিন্ন মত বা ধর্মাবলম্বী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহানুভতিশীল থাকা। এমনকি তাদের পক্ষ থেকে ইসলাম প্রচারে বিরোধিতা করা হলেও সহিষ্ণু আচরণ করা।

৭. বিনয় ও নম্রতা-
সচ্চরিত্রভূক্ত বিষয়সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি বিনয় ও নম্রতা। ইসলাম মানুষকে বিনয়ী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনের সকল ক্ষেত্রেই বিনয় অবলম্বন করতেন। দাওয়াতের অন্যতম কৌশল দাওয়াতী কার্যক্রমে বিনয় অবলম্বন করা। কুরআনের একাধিক আয়াতে বিনয় অবলম্বনের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। মহান আল্লহ বলেন,

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيْظَ الْقَلْبِ لاَنْفَضُّواْ مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ

-(হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রহমতে আপনি তাদের প্রতি কোমলহৃদয় হয়েছিলেন। তা না হয়ে আপনি যদি তাদের প্রতি রূঢ় ও কঠোর হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার আশপাশ হতে সরে পড়তো। কাজেই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন। (পরামর্শ শেষে) আপনি কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হলে আল্লাহর উপর ভরসা করুন। যারা (আল্লাহর উপর) ভরসা রাখে, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১৫৯)

৮. মার্জিত শব্দ ব্যবহার করা-
দাওয়াতের ক্ষেত্রে দাঈর ভাষাগত বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে দাঈর উচিত মাতৃভাষায় মার্জিত শব্দে সুস্পষ্ট ও সহজভাবে দ্বীনের দাওয়াত উপস্থাপন করা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধীরে-সুস্থে উপদেশ দিতেন। এতই ধীরে যে, ইচ্ছে করলে কেউ তাঁর প্রতিটি কথা গণনা করতে পারতেন (সহীহ বুখারী)। কুরআনে বক্তৃতা প্রদানের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে কথা বলার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। হযরত লুকমান (আ) তাঁর পুত্রকে উপদেশ দিয়েছেন,

وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ إِنَّ أَنْكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيْرِ

-কথা বল নিচুস্বরে। জেনে রেখ, নিশ্চয় গাধার কণ্ঠই সবচেয়ে অপ্রিয়। (সূরা লুকমান, আয়াত-১৯)

৯. অশ্লীল, অশোভন ও অনর্থক কথা থেকে বিরত থাকা-
দাওয়াতের ক্ষেত্রে অশোভন, অপ্রাসঙ্গিক ও অনর্থক কথা বর্জন জরুরী। অপ্রাসঙ্গিক, অনর্থক কথার কারণে অনেক সময়ই মূল বক্তব্য হারিয়ে যায়। শ্রোতা এতে করে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। যে কারণে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনর্থক কথা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আলী (যাইনুল আবেদীন) ইবনুল হুসাইন (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

اِنَّ مِنْ حُسْنِ اِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكَهُ مَا لَا يَعْنِيْهِ

-কোনো ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অর্থহীন কথা বা কাজ ত্যাগ করা। (তিরমিযী, হাদীস নং ২৩১৮)
বর্তমান সময়ের অনেক আলোচককে বক্তব্যের মাঝে অশ্লীল বাক্য, সিনেমার গান ও ডায়লগ ইত্যাদি ব্যবহার করতে দেখে যায়। কেউ কেউ যৌন ইঙ্গিতমূলক গল্প-কৌতুকও বলে থাকেন। এর কোনোটাই ইসলাম সমর্থন করে না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুমিন কখনো দোষারোপকারী, অভিশাপদাতা, অশ্লীলভাষী ও গালাগালকারী হয় না। (তিরমিযী, হাদীস নং ২০৪৩)

১০. গীবত চর্চা না করা-
ইসলামী শরীআতে গীবত বা পরনিন্দা করা অবৈধ। আল্লাহ বলেছেন,

وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ

-আর তোমরা একে অন্যের গীবত করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে ভালোবাসবে? বস্তুত তোমরা নিজেরাই তা অপছন্দ করে থাকো। (সূরা হুজরাত, আয়াত-১২)
গীবত করাকে আল-কুরআনে নিজ মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। সুতরাং গীবত খুবই অপছন্দনীয় কাজ। সুস্থ বিবেকবান কোনো মানুষেই এরূপ কাজ পছন্দ করতে পারে না। আল্লাহ তাআলাও গীবত করা পছন্দ করেন না।
পবিত্র হাদীসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের গিবতের পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গীবত ব্যভিচারের চাইতেও মারাত্মক। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! গীবত কিভাবে ব্যভিচারের চাইতেও মারাত্মক অপরাধ হয়? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোনো ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তাওবা করলে আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দেন। কিন্তু গীবতকারীকে ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ মাফ করেন না যতক্ষণ না যার গীবত করা হয়েছে সে ব্যক্তি মাফ করবে। (বায়হাকী)

১১. আত্মসমালোচনা-
চরিত্র সংশোধনের ক্ষেত্রে আত্মসমালোচনা একটি কার্যকর উপায়। মানুষকে সঠিক পথ ও সংশোধনের রাস্তা দেখাতে আত্মসমালোচনার ভূমিকা অনন্য। আত্মসমালোচনা করলে নিজের ভুল ধরা পড়ে এবং পরবর্তী সময় সে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক কাজটি করতে পারে। যে ব্যক্তি নিজের দোষ-ত্রুটি, অন্যায় নিজে বিচার করে, সে কখনো আত্মপ্রীতি ও আত্মম্ভরিতার শিকার হতে পারে না। নিজের গুনাহের কথা যে চিন্তা ও হিসাব করে সে ব্যক্তি সহজে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে পারে। আত্মসমালোচনার গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَلْتَنظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ- وَاتَّقُوا اللهَ- إِنَّ اللهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُون

-হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেকেই চিন্তা করে দেখুক, আগামীকালের জন্য সে কী (পুণ্য কাজ) অগ্রিম পাঠিয়েছে। (সূরা হাশর, আয়াত-১৮)
সমকালীন দাঈদের মধ্যে আত্মসমালোচনার প্রবণতা নেই বললেই চলে। বরং অধিকাংশকেই পরনিন্দা চর্চা করতে দেখা যায়। এর ফলে দাঈদের চারিত্রিক ত্রুটি দূর হচ্ছে না। ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, দাঈদের পরনিন্দার প্রবণতায় ভয়াবহ সামাজিক বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে এবং কলহে রুপ নিচ্ছে দাঈদের পারস্পরিক বিদ্বেষ।

শেষ কথা
ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি কাজ দ্বীনের দাওয়াত। এটি বান্দার প্রতি মহান আল্লাহ প্রদত্ত একটি দায়িত্বও বটে। যে দায়িত্ব যুগে যুগে নবী রাসূলগণ এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দগণ নিঃস্বার্থভাবে পালন করে এসেছেন। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে নানা কারণেই সৎ, দক্ষ ও যোগ্য দাঈ সৃষ্টি হচ্ছে না। অনেকেই দাওয়াতী কার্যক্রমকে লাভজনক পেশা হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেছেন। যে কারণে ইসলামের মর্মবাণী সাধারণ মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারছে না। এ অবস্থায় দাঈদের আবশ্যক কর্তব্য তাদের জ্ঞানগত অযোগ্যতা দূরীকরণে সর্বাত্মক চেষ্টা করা। নিজেদর লোভ-লালসাসহ অন্যান্য চারিত্রিক ত্রুটি সংশোধন করা। এর পাশাপাশি দাওয়াত প্রদানের ক্ষেত্রে নবীজী (সা.), সাহাবী, তাবিঈসহ ওলী-আউলিয়ার নীতি আদর্শ অনুশীলন করা। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের জন্য আদর্শ দাঈ হিসেবে কবুল করুন।

লেখক: মুফতি আলমাস হোসাইন দোহারী
মোহতামিম: মাহমুদপুর দারুসসুন্নাহ বালিকা মাদরাসা। দোহার-ঢাকা.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

© All rights reserved © 2021 Voice Barta
Theme Customize Shakil IT Park