ভয়েস বার্তা ডেস্ক: নিজস্ব প্রতিবেদন
জাতীয় কাউন্সিল ও উলামা-মাশায়েখ সম্মেলন থেকে
অনতিবিলম্বে সংসদে আইনের মাধ্যমে কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের আমির আল্লামা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর। তিনি বলেন, এ সরকারের সবাই জানে কাদিয়ানীরা অমুসলিম। ফলে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করতে বাধা কোথায়?
বুধবার মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের মধুপুরস্থ জামিআ ইসলামিয়া হালীমিয়া মাঠে খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতীয় কাউন্সিল ও উলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
পীর সাহেব মধুপুর আরো বলেন, আমরা মুসলমান। আমাদের বিশ্বাস হলো হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল। তারপরে নতুন করে কেউ নবী-রাসূল হিসেবে আগমণ করবে না। এটা কুরআন-সুন্নাহ ইজমা-কিয়াসের সর্বসম্মত বক্তব্য। উপরোক্ত বিষয়টি দ্বীন ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস। যা অস্বীকার করলে কিংবা সন্দেহ পোষণ করলে ঈমান থাকে না। অথচ তথাকথিত ‘আহমদীয়া মুসলিম জামাত’ নামধারী কাদিয়ানীরা নিজেদের মুসলিম দাবি করলেও উল্লেখিত বিশ্বাসটি অস্বীকার করে এবং ভারতের জন্ম নেয়া গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে নিজেদের নবী ও রাসূল হিসেবে বিশ্বাস করে। যার ফলে তারা মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস থেকে বের হয়ে যায়। তাদের নতুন এক ধর্ম বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটা হলো- কাদিয়ানী ধর্মমত। তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করলে তারা তাদের নতুন ধর্ম কাদিয়ানী ধর্মের অনুসারী হিসাবে এদেশে বসবাস করবে।
তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন জাতি ধর্মের মানুষ এদেশে একসাথে বসবাস করে। বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ নাগরিক ইসলাম ধর্মের অনুসারী-মুসলিম। সকল ধর্মের অনুসারীরা স্বাধীনভাবে তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। বাংলাদেশের মহান সংবিধানেও ধর্মীয় স্বাধীনতা সংরক্ষণের কথা সুস্পষ্টভাবে রয়েছে।
তিনি বলেন, কাদিয়ানীদের অসংখ্য কুফুরী মতবাদের মধ্যে একটি মতবাদ হলো এই, ‘মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী প্রতিশ্রুত মাসীহ, ইমাম মাহদী এবং প্রেরিত নবী ও রসূল’ (নাউজুবিল্লাহ ) (রুহানী খাযায়েন-খ:১৮ পৃ:২০৭, কালিমাতুল ফসল-১৫, লেখক: মির্জাপুত্র বশির আহমদ এম এ, আখবারে বদর আল:২ পৃ:৪৩)। এসকল অসংখ্য কুফুরী মতবাদ প্রচার করে তারা সরলমনা মুসলমানদের ঈমান ধ্বংস করছে।
সম্মেলনে অন্যান্য জাতীয় নেতৃবৃন্দ বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে এবং ইসলামের নামে তাদের সকল প্রকাশনা, প্রচার-প্রচারণা নিষিদ্ধ করতে হবে, ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার করা অমুসলিমদের জন্য সম্পূর্ণ অবৈধ। অতএব ইসলামের সকল পরিভাষা যেমন কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত, মসজিদ, আজান, ইকামত, নবী, মাহদী শব্দ ইত্যাদি তাদের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। বক্তারা আরো বলেন, কাদিয়ানীরা শ’ শ’ একর জমি কিনে রাষ্ট্রের ভেতরে আলাদা রাষ্ট্র কায়েম করার পরিকল্পনা করছে, তাদের এই পরিকল্পনা ধ্বংস করে দিতে হবে। আমরা সরকারকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
তারা আরো বলেন, মধুপুর পীর সাহেবের নেতৃত্বে সারাদেশে কাদিয়ানী বিরোধী আন্দোলন জোরদার করে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। সম্মেলনে বক্তারা কারাগারে বন্দী নিরীহ আলেমদের মুক্তি এবং মাদরাসা ছাত্র হাফেজ রেজাউল করিম হত্যার বিচার দাবি করেন।
সম্মেলনে লিখিত দাবি জানানো হয়, ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোঃ আব্দুল জলিল ও বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আইনের দৃষ্টিতে কাদিয়ানীরা অমুসলিম বলে যে রায় প্রদান করেছে অতিসত্বর তা জাতীয় সংসদে বিল পাস করে কাদিয়ানীদের ‘অমুসলিম সংখ্যালঘু’ ঘোষণা করতে হবে।
এছাড়া সম্মেলনে পাঁচ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচিগুলো হলো-১. আগামী দুই মাসের মধ্যে সকল জেলায় কমিটি গঠন, ২. দেশের প্রত্যেক জেলার ডিসি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, ৩. রাজধানী ঢাকায় খতমে নবুওয়াত মহাসমাবেশ, ৪. আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মত পঞ্চগড়ে খতমে নবুওয়াত মহাসম্মেলন এবং ৫. কুচিয়ামোড়া খতমে নবুওয়াত মহাসম্মেলন।
সম্মেলনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ ইমাদুদ্দীন। বক্তৃতা করেন, বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, জামিয়া মুহাম্মদিয়ার মুহতামিম মাওলানা আবুল কালাম, মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মাওলানা রশিদ আহমদ, মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ, মুফতি মোহাম্মদ আলী, আশিকুর রহমান কাসেমী, মাওলানা খোরশেদ আলম কাসেমী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক আল-আযহারী, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজী, মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মুফতি রেজাউল করিম আবরার, মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী, নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আবু তাহের জিহাদী, মাওলানা আবুল কাশেম আশরাফী, হাফেজ মাওলানা আহমাদুল্লাহ ও মুফতি নাজমুল হাসান বিন নুরী প্রমুখ
কাউন্সিলে আল্লামা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুরকে সভাপতি ও মুফতি মোহাম্মদ ইমাদ্দিনকে মহাসচিব করে ২৪৮ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।