ভয়েস বার্তা ডেস্কঃ ১৪৪৫হিঃ/ ২০২৩ঈ :
আমাদের কোনো একটা ঘটনা বর্ণনা করতে হলে প্রথমেই বলতে হবে, কবে ঘটেছিল ঘটনাটি? কোন বছর কিংবা কোন মাস? অথবা কোন তারিখ? এই তিনটি তথ্য লাগবেই। এ ছাড়া আপনি সামনে অগ্রসর হতে পারবেন না। এবং উক্ত ঘটনা অসম্পূর্ণই থেকে যাবে।
পৃথিবীর শুরুতে মানুষ সন-তারিখ ব্যবহার করতো না। কারণ, তখনো সন আবিষ্কার হয় নি। মানুষ তখন তারিখ বলার জন্য বড় কোনো যুদ্ধ কিংবা প্রসিদ্ধ কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে বলতো।
যেমন, ধরা যাক, সুফরা ট্রাজেডি নামে একটা দুর্ঘটনা ঘটলো। এতে অনেক মানুষ মারা গেল। এখন এই সুফরা ট্রাজেডির কয়েকদিন পরে কারো দাদা মারা গেল।
বছরখানেক পর যখন তাকে কেউ জিজ্ঞাসা করবে, তোমার দাদা কবে মারা গেছে? তখন সে বলবে, সুফরা ট্রাজেডির কয়েকদিন পর। এই ভাবেই চলতো সেই সময়কার সংস্কৃতির তারিখধারা।
প্রাচীনকালের আরব চন্দ্রবর্ষ
আরবে চন্দ্রবর্ষের প্রচলন ছিল বহু আগ থেকেই। মানুষ ধর্মীয় উৎসব ও অন্যান্য দিনগুলো সেই তারিখ ফলো করে পালন করতো। কিন্তু এই তারিখগুলো একত্র করে কোনো বছর গঠন করা হয় নি।
অর্থাৎ মানুষ তখন শুধু তারিখ ও মাস গণনা করতো। কিন্তু বছর গণনা করতো না।
যেমন কেউ আপনাকে চিঠি লিখলো এবং তার নিচে তারিখ দিল এভাবে,
১ শাওয়াল। আপনি এই এক শাওয়াল দ্বারা কি বুঝবেন? এটা অবশ্যই বুঝতে পারবেন যে, এটা দ্বারা এ শাওয়াল উদ্দেশ্য করা হয়েছে।
কিন্তু এটা কি বুঝতে পারছেন যে, কোন মাসের এক শাওয়াল এখানে উদ্দেশ্য করছে?
এমন একটা অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছিল হযরত ওমর রা. এর যামানায়।
খলিফা হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর যামানায় হিজরী সনের সূচনা
হযরত ওমর রা. এর খেলাফতকালে আরবরা সর্বপ্রথম বহির্বিশ্বে অভিযান পরিচালনা করে। তখন সরকারি কাগজপত্রে এবং হিসাবপত্রে একটা গড়মিল দেখা দেয়।
যেহেতু নির্দিষ্ট কোনো সন ছিল না। তাই কাগজে লেখা থাকতো, জিলহজ্জ মাসের ১২ তারিখ বা এমন কিছু একটা।
এখানেই সমস্যাটা হয়। এই জিলহজ্জ মাস কোন বছরের জিলহজ্জ, তা কিন্তু বুঝার উপায় ছিল না।
তখন ওমর রা. হযরত আবু মুসা আশআরী রা. এর নিকট পত্রপ্রেরণ করেন যে,
আপনার এমন কিছু পত্র আমার নিকট হস্তগত হয়েছে যে, যাতে কোনো তারিখ নেই।
এদিকে আবার ইয়ামেন থেকে এক ব্যক্তি ওমর রা. এর নিকট আসলো। তিনি তখন বললো, ইয়ামেনিরা তাদের চিঠিতে একটা তারিখ লেখে। আপনারাও অনুরূপ তারিখ লিখুন।
এদিকে আবার একটা পত্র আসে ওমর রা. এর নিকট। যাতে শুধু শাবান মাস লেখা ছিল।
ওমর রা. বললেন, এটা আমি কিভাবে জানবো যে, এটা কোন বছরের শাবান?
সাহাবাদের সাথে পরামর্শ
সে সময় ওমর রা. সাহাবাদেরকে বললেন, মানুষের গণনার জন্য একটা সময় নির্ধারণ করে দিন। যাতে তারা সময় গণনা করতে পারে।
কয়েকজন সাহাবা বললেন, রোমানদের তারিখ গণনা করুন।
ওমর রা. বললেন, তাদের তারিখ অনেক দীর্ঘ। তারা সিকান্দারের সময় থেকে তারিখ গণনা করে।
কেউ বললো, পারসিকদের তারিখ নির্ধারণ করা যায়। এটাও প্রত্যাখ্যাত হলো।
অবশেষে মজলিসে সিদ্ধান্ত হলো, একটি পৃথক পঞ্জিকা নির্ধারণ করা হবে। তখন আবার প্রশ্ন আসে, কবে, কখন ও কোথা থেকে এর গণনা শুরু হবে?
নবীজির জন্ম থেকে? নবীজির হিজরত থেকে নাকি নবীজির ওফাত থেকে?
উমর রা. বললেন, হিজরত থেকেই পঞ্জিকার সূচনা হবে। কারণ, এর মাধ্যমেই হক-বাতিলের মাঝে পার্থক্য চূড়ান্ত হয়।
সিদ্ধান্ত হয় হিজরত থেকে এর পঞ্জিকা গণনা করা শুরু হবে। কিন্তু এখানে একটা সমস্যা বাঁধে।
আরবী মাস শুরু হয় মহররম থেকে। হিজরত হয়েছিল, রবিউল আউয়াল মাস থেকে।
তখন উসমান রা. বললেন, মহররম থেকে বছর গণনা করা উচিৎ। কারণ, এটা সম্মানিত মাস।
সবাই এটাকে প্রথম মাস হিসেবে জানে। আর এই মাসেই লোকেরা হজ্জ থেকে ফিরে আসে।
শেষ পর্যন্ত উসমান রা. হিজরতের সময় থেকে বছর গণনা শুরু করেন এবং তা মহররম মাস থেকে শুরু হয়।