ভয়েস বার্তা ডেস্কঃ
‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ির’ এদৃশ্য নিঃসন্দেহে আমাদের সকলকেই মুগ্ধ করে। কিন্তু এর নেপথ্যের গল্প যতবার শুনবেন ততবার নিজেকে খুব অপরাধী মনে হবে। মনে হয়, আমরা বুঝি এখনো আদিম যুগের অন্ধকারেই নিমজ্জিত। আপনি যখন তাদের জীবন নিয়ে গল্প করবেন । অল্প কথাতেই বুঝতে পারবেন তারা যেন অন্য দুনিয়ার বাসিন্দা। তাদের জীবনসূর্য আটকে গেছে এই চা বাগানের সীমানাতেই। ‘পাতা তুলে, পাতা খায়, পাতার ঘরে থাকে আর উদর পুরে বাংলা খায়। দিন শেষে ঝুপরি ঘরে বসে ছেলে-বুড়ো সকলেই বাংলায় বুঁদ হয়ে থাকে। যদি বলি পানির মতো সস্তা এই বাংলা ভুল হবে তা প্রায় বিনে পয়সাতেই মেলে। দিনভর রোদের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া দেহ নিয়ে দিনান্তে বসে যায় ঝুপরিতে তরল নিয়ে। নেশার ঘোর তাদের যুগ যাতনা ভুলে যেতে সাহায্য করে।
চা শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন তাদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য। অর্থাৎ তাদের অধিকারের জন্য যে মজুরি তারা চান এটিও কি ন্যায্য। বাংলাদেশের সিলেট – চট্টগ্রাম বিভাগের ১৬৭ টি নিবন্ধিত চা বাগানে সোয়া এক লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। বংশপরম্পরায় তারা এখানেই কাজ করেন। যুগের পর যুগ চা শ্রমিকরা নিজেদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত এবং অবহেলিত হয়ে আসছে। চা শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে আন্দোলন করছেন । চা শ্রমিকদের নামমাত্র মজুরিতে তাদের জীবন যাপনের করুণ চিত্র গণমাধ্যমের কল্যাণে দেশের মানুষ দেখেছেন ও মর্মাহত হয়েছেন। জাতি প্রত্যাশা করেছিলো সরকার অবহেলিত শ্রমিকদের জন্য যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের আর্তনাদ, মানবেতর জীবনযাপন ও আকুতিকে এড়িয়ে গিয়ে একটি বিশেষ মহলের ইচ্ছামতো মাত্র ১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারন করে দিয়েছেন যা শ্রমিকদের সাথে তামাশা ছাড়া কিছু নয়।
এ সিদ্ধান্ত কোনভাবেই মানবিক ও ন্যায়সঙ্গত নয়। যে কারণে মজুরি নিয়ে বিরোধ সর্বশেষ ২০২০ সালে যখন চা শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বাগান মালিকদের সংগঠন চা সংসদ মজুরি নিয়ে চুক্তি করেছিল, সেসময় মজুরি বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। সে প্রতিশ্রুতি ১৯ মাসেও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে শ্রমিকরা মানবেতন জীবনযাপন করছেন। তবে মালিকদের সংগঠন বলছে, ৩০০ টাকার প্রতিশ্রুতি কখনো দেয়া হয়নি। তাদের কথা, শ্রমিকদের আবাসন, রেশনসহ যেসব সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়, তার অর্থমূল্য চারশো টাকার চেয়ে বেশি। শ্রমিকদের বক্তব্য হলো-
বাংলাদেশের চা বাগান গুলোয় প্রতিদিন ১২০ টাকা দৈনিক মজুরির বাইরে সপ্তাহে সাড়ে তিন কেজি চাল বা আটা রেশন হিসাবে দেয়া হয়। এছাড়া বাগানের জায়গায় থাকার জন্য বাঁশ, কাঠ, টিন আর এককালীন ৪/৫ হাজার টাকা দেয়া হয়, তবে ঘর শ্রমিকদের নিজেদের তুলে নিতে হয়। সাধারণত একজন চা শ্রমিককে প্রতিদিন অন্তত ২০ কেজি চা পাতা সংগ্রহ করতে হয়। চারা গাছ হলে অন্তত ১৬ কেজি পাতা সংগ্রহ করতে হয়। এর বেশি সংগ্রহ করতে পারলে কেজি প্রতি চার থেকে পাঁচ টাকা বাড়তি পাওয়া যায়। কাপড় কিনতে হয়, বাচ্চাদের পড়ালেখা করাতে হয়, চাল, ডাল সবজি কিনতে হয়। এই ১২০ টাকায় কি এতো কিছু হয়?”
এটি শুধু তাদের বক্তব্য নয় মানবিক দৃষ্টিতে আমাদের সকলের বক্তব্য অর্থাৎ চা শ্রমিকদের সাথে তামাশা না করে তাদের ন্যায্য অধিকার দেওয়ার আহবান রইলো।