মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন সিংগাইর উপজেলার জামশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিঠু।
দক্ষিণ জামশা গ্রামের এক তরুণীর (২২) দায়ের করা মামলায় আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে সোমবার (১৮ অক্টোবর) রাতে নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম মোল্যা বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ওই নারী তার পারিবারিক সমস্যা সমাধানের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিঠুর কাছে যান। পরে চেয়ারম্যান তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর ২০১৯ সালের ১ জুলাই ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে নিয়ে তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। এতে ওই নারী রাজি না হলে এফিডেফিটের মাধ্যমে বিয়ের ফাঁদে ফেলে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
একপর্যায়ে ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার মেঘুলা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করতে থাকেন। এ সময় ওই নারী গর্ভবতী হলে তাকে কৌশলে ওষুধ খাইয়ে গর্ভপাত ঘটানো হয়। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জের বান্দুরা মডার্ন ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা করানো হয়। এর কিছু দিন পর অভিযোগকারী জানতে পারেন তাদের বিয়ের আইনগত কোনো বৈধতা নেই।
চেয়ারম্যানকে পুনরায় বৈধ বিয়ের জন্য চাপ দিলে তিনি তাতে রাজি না হয়ে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ ওই নারীকে মারধর করেন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে চেয়ারম্যান মিঠু তার ইউনিয়নের দক্ষিণ জামশা গ্রামের রতন বসাকের বাড়ি ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করতে থাকেন। ওই নারী পুনরায় স্ত্রীর মর্যাদায় তার পরিবারে উঠতে চাইলে চেয়ারম্যান তাকে আবারও শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন।
অবশেষে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে মানিকগঞ্জ আদালতের শিশু ও নারী নির্যাতন দমন অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। (আদালতের মিস পিটিশন মামলা নম্বর- ১৬৩/২০২১.
গ্রেফতারকৃত চেয়ারম্যান মিঠু ওই তরুণীকে বিবাহিত স্ত্রী দাবি করে বলেন, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমাকে ঘায়েল করতে চাইছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। আমার দ্বিতীয় স্ত্রীকে ব্যবহার করে আমার বিরদ্ধে ধর্ষণ মামলা করানো হয়েছে।
এ বিষয়ে সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম মোল্যা বলেন, গত ৫ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন এক নারী। মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে মিঠুর বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দিলে আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয় এবং তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তাকে গ্রেফতার করে সকালে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।